• ভাসুর সজলের স্ত্রী দীপাকে খুঁজছে পুলিশ
আনোয়ার হোসেন মানিক []চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে স্বামী- শ্বাশুড়ী- ভাসুরের দেয়া আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে দিপীকা আচার্য্য মনিকা নামে এক গৃহবধু চার দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
ঘটনাটি ঘটে গত ৩০এপ্রিল মঙ্গলবার হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বকুলতলা দীপিকার শ্বশুরালয়ে।
জানা যায়,বকুলতলা রোডের রঞ্জিত আশ্চার্যের ছেলে বিপুল আচার্য্যের স্ত্রী দিপিকা আশ্চার্য্য মনিকা। দশ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। তার বাবার বাড়ী নরসিংদী জেলার ছোট মাধবদী উপজেলার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড। তাদের দাম্পত্য জীবনে তিন বছরের শিশু কন্যা রয়েছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহবধূর দেয়া জবানবন্দিতে উঠে এসেছে পাষান্ড স্বামী ও তার পরিবারের অমানুষিক নির্যাতনের কাহিনী। স্বামী বিপুল আশ্চার্য্যের দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে শরীরের শতকরা ৯২ ভাগ অংশ।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন গৃহবধূর ভাই অরবিন্দ আশ্চার্য্য।অভিযোগে বলা হয়, গত ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে স্বামী বিপুল আশ্চার্য্য ও ভাসুর সজল আশ্চার্য্য কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে মনিকাকে হত্যার চেষ্টা করে। নিছক এই ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হয়। দুর্ঘটনার পর মনিকাকে প্রথমে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরবর্তীতে কুমিল্লা মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটি ভর্তি করানো হয়।
বড় ভাই অরবিন্দ আশ্চার্য্য বলেন, মোবাইল ফোনে বোনের দুর্ঘটনার খবর শুনে ঢাকা মেডিকেল বার্ণ ইউনিটে গিয়েছি। সেখানে মনিকা জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘মারধর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তার স্বামী শ্বাশুড়ী ও ভাসুর। ঘটনার পর থেকে আমার সাড়ে ৩ বছরের ভাগনীকে নিয়ে সজলের স্ত্রী দিপা পলাতক রয়েছে।’‘আগুন লাগানোর পূর্বে তাকে মেরে ফেলার জন্য মারধর করেছে। তার মাথা ও কপাল ফেটে গেছে। যে রুমে দিপিকাকে নির্যাতন করা হয়েছে, ওই রুমের দেয়ালের সাথে রক্তের দাগ রয়েছে। বিপুল, সজল, তাদের মা সন্ধ্যা রাণী আশ্চার্য্য, সজলের স্ত্রী দিপা আশ্চার্য্য মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার বোনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।’
হত্যার কারণ জানতে চাইলে অরবিন্দ আশ্চার্য্য বলেন, ‘বিপুল মাদকাসক্ত। তাদের পরিবারে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। সে ঘরে বসেই ইয়াবা সেবন করতো। সজল ও বিপুলদের অনেক টাকা মূল্যের একটি জায়গা আছে। কয়েক মাস যাবত ওই জায়গা বিক্রয়ের চেষ্টা করে আসছে সজল ও বিপুল। আমার বোন দিপিকা ওই জায়গা বিক্রয়ের বাঁধা দিয়ে আসছিল। এছাড়াও তাদের পারিবারিক কলহ ছিল দীর্ঘ দিনের।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনর্চাজ মো.আলমগীর হোসেন রনি শুক্রবার গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়টি ক্রাইম রিপোর্ট কে নিশ্চিত করে বলেন, ভিকটিমের শরীরের প্রায় ৯২ শতাংশ জ্বলসে গেছে। মৃত্যুর কাছাকাছি থাকা এই গৃহবধূ চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ ও ভাই অরবিন্দ আশ্চার্য্যরে কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে তার স্বামী, শ্বাশুড়ি ও ভাসুরকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।ভাসুুর সজলের স্ত্রী দিপা আচার্য্যকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ভাসুর সজলকে হাজীগঞ্জ বাজার এবং স্বামী বিপুল ও শ্বাশুড়ি সন্ধ্যা রাণী আশ্চার্য্যকে ঢাকা মেডিকেল থেকে আটক করে চাঁদপুর আদালতে হাজির করানো হয়। পরে আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।